ফোবিয়া এবং প্যানিক অ্যাটাক
প্যানিক বা আতঙ্কের রেসপন্স হলো ‘লড়াই করো অথবা পালিয়ে যাও’-এর অংশ। প্যানিক বা আতঙ্ক হলো মানুষের শরীরের প্রতিরক্ষা সিস্টেমের একটি অপরিহার্য অংশ। কিন্তু কখনো কখনো এটি অনেক মারাত্মক রূপ ধারণ করে এর অযৌক্তিক ভয় এবং প্যানিক অ্যাটাকের কারণে।
আমরা সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময় ভালো কারণেও প্যানিক বা আতঙ্কে ভুগে থাকি। ট্রাফিক সবুজ বাতি জ্বলল, আমরা রাস্তা পার হতে শুরু করেছি, সেখানে একটি গাড়ি দ্রুতগতিতে না থেমেই আসতে শুরু করে। এ সময় আমরা প্যানিকে বা আতঙ্কে পড়ি। এটা একেবারেই স্বাভাবিক। এ সময় আমরা যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা দিয়ে দৌড়ে অন্য পারে যাই নিরাপদ হওয়ার জন্য। কিন্তু যদি একেবারে ক্ষতিহীন এরকম অনুভূতি প্রতিদিনই আমরা অনুভব করি, অথবা এর চেয়ে ভয়ানকভাবে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়াই কোনো সতর্কতা ছাড়াই প্রতিদিন এ রকম অনুভূতির শিকার হয়। কেউ কেউ ভয় পেতে মজা পায়, ভয়কে উপভোগ করে। তবে এটা আপনার জন্য অন্য রকম ব্যাপার হতে পারে যদি আপনার আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ আপনার জানা না থাকে। তাই এ অযথা প্যানিক বা আতঙ্ককে বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন। নয়তো এটি আপনার মাঝে বিরক্তিকর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
কমন ফোবিয়া বা সাধারণ ভয়
যেকোনো বিষয়েই ভয় পাওয়ার মতো ব্যাপার ঘটতে পারে। যেমন- দাঁতের চিকিৎসায়, বিমানে উড়ার সময়, রক্তদানে বা রক্ত দেখে, সামাজিক ভীতি, খোলা জায়গার ভয় বা অ্যাগারোফোবিয়া। যখন কোনো মানুষ যারা ফোবিয়ায় আক্রান্ত তারা যদি কোনো কিছুর সম্মুখীন হয় যা তাদের মাঝে আতঙ্কের উদ্রেক করে অথবা তারা বুঝতে পারে যে এমন ভয়ানক ব্যাপার সামনে আসছে তখন তারা উদ্বিগ্নতার কিছু শারীরিক লক্ষণ-উপসর্গ অনুভব করে থাকে। অ্যাংজাইটি বা উদ্বিগ্নতার দীর্ঘ লক্ষণ-উপসর্গের তালিকা থাকে এবং বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ-উপসর্গের সম্মুখীন হয়।
অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই তারা যেটাতে ভয় পায় তা সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলে। তাই তাদের জীবনটা হয়ে ওঠে ভয়ের নানা পরিস্থিতি ও পরিবেশকে এড়িয়ে চলার কাঠামোর মধ্যে দিয়ে। কিন্তু কোনো কোনো সময় এসব ভয়ানক ব্যাপার, পরিবেশ, পরিস্থিতি বা বস্তু এড়িয়ে চলা সম্ভব হয় না। যেমন-ভয়ে কেউ সারা বছর ধরে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যায় না, শেষে ইমার্জেন্সি চিকিৎসার জন্য দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে হলো। আবার কেউ হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে শরীর কেটে যাওয়ার কারণে মেডিকেলে জরুরি ভিত্তিতে যেতে হলো। আবার কোনো দরকারি মিটিং যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তাতে যেতে হলো, এ সময় প্যানিক বা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ-উপসর্গ
- বুক ধড়ফড় করা বা প্যালপিটিশন দেখা দেয়া
- শ্বাসকষ্ট হওয়া।
- বুক ব্যথা করা
- মুখ লাল হয়ে আসা
- শরীর ঘামতে থাকা
- অসুস্থ অনুভব করা
- কাঁপুনি
- মাথা ঝিমঝিম করা
- মুখ শুকিয়ে আসা
- টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়
- অজ্ঞান হয়ে যাবার অনুভূতি লাগা
- মাথা ঘোরায়
- অস্থিরতা লাগতে থাকে
- মুখ দিয়ে কথা আসতে চায় না।
- বমি বমি ভাব লাগে
এ ধরনের লক্ষণ-উপসর্গ খুব গভীর হতে পারে তখন একজন আতঙ্কিত ব্যক্তি মনে করতে পারে যে তার বুঝি হার্টঅ্যাটাক হতে যাচ্ছে। আর এ আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। কোনো কোনো ব্যক্তি তাদের নিয়ন্ত্রণহীন শরীরের আতঙ্কিত প্রতিক্রিয়া বা লক্ষণ দর্শকের মতো অনুভব করতে থাকে। এ সময় মনে হয় তাদের শরীর যেন ভীষণ যন্ত্রণার মধ্যে আছে, যা খুবই কষ্টকর এবং বর্ণনার অতীত। অনেক সময় মনে হয় যে যা ঘটছে তা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাদের থেকে আলাদা হয়ে অবাস্তব কোনো পন্থায় এমনটা হচ্ছে। এটাকে বলা হয় ডিপারসোনালাইজেশন। এটা দিয়ে মনে হয় যে এটা হয়তো প্যানিক অ্যাটাক থেকে এক ধরনের মুক্তি। কিন্তু না, এটা আসলে আরো খারাপ অনুভূতি। আরেক ধরনের মানুষ আছে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্যানিক অ্যাটাকের অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকে। এটা অনেক সময় সাধারণ উদ্বিগ্নতা বা জেনারেল অ্যাংজাইটির সাথে দেখা দেয়।
ফোবিয়ায় কত মানুষ আক্রান্ত হয়?
কিছু কিছু ফোবিয়া অন্য ফোবিয়ার চেয়ে বেশি কমন। প্রতি বছর প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ বিমানে উড়তে গিয়ে, দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে এবং রক্তদান করতে গিয়ে বা রক্ত দেখে ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়। এগুলো হলো সিম্পল বা সাধারণ ফোবিয়া।
সোশ্যাল ফোবিয়া বা সামাজিক ভীতি খুব কম কমন। এটি ১০০০ মানুষের মধ্যে ২৫ জনকে আক্রান্ত করে।
অ্যাগারোফোবিয়া ১০০০ মানুষের মধ্যে প্রায় ৩০ জনের বেলায় দেখা যায় এবং এটি নারীদের মধ্যে দ্বিগুণভাবে দেখা দেয়। প্যানিক অ্যাটাক প্রতি বছর ১০০০ মানুষের মধ্যে ৩০ জন মানুষকে আক্রান্ত করে এবং এটিও নারীদের বেলায় দ্বিগুণ ঘটে থাকে।
প্যানিক অ্যাটাক বা ফোবিয়ার নানা রকম চিকিৎসা পাওয়া যায়। ওষুধ দ্বারা এর চিকিৎসা করা হয়। তবে এর জন্য বিচলিত না হয়ে একজন মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ডা: জিনাত ডি লায়লা
সহকারী অধ্যাপক,
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
চেম্বার : উত্তরা ল্যাবএইড, ইউনিট-২,
সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা।