ভাঙা দাঁত কতটুকু ক্ষতিকর
গত দু’বছর আগে মুড়ি খেতে গিয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব রহমান সাহেবের ওপরের চোয়ালের পেছনের দিকের দু’টো দাঁত ভেঙে যায়। কিন্তু তিনি ভ্রুক্ষেপ করলেন না। সমস্যা হলেও এমনিভাবেই দু’টো বছর কাটিয়ে দিলেন। ধীরে ধীরে ব্যথা শুরু হলো। আর ব্যথা হলেই গইইঝ ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যথার ওষুধ খেয়েই তিনি আরও বছরখানেক কাটিয়ে দিলেন। এবার হঠাৎ করেই এমন ব্যথা শুরু হলো যে, কোনো ব্যথার ওষুধই কাজে লাগছে না। প্রচণ্ড ব্যথায় রাতে তিনি ঘুমাতে পারলেন না। দিনে ঠিকমতো অফিস করতে পারলেন না। মুখটা এক পাশে ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় অফিসে তার এক অফিস সহকারী সুচিকিৎসার জন্য এক ডেন্টাল সার্জনের কাছে নিয়ে গেলেন এবং তখন রহমান সাহেবের দাঁতের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, শেষের দাঁত দু’টো ফেলে দিতে হলো। ফলে তিনি ওই পাশ থেকে খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করতে পারছেন না। সারাক্ষণ তার এত বড় ভুলের খেসারত নিয়ে তিনি কষ্ট পাচ্ছেন। কথা হলো, শিক্ষিত মানুষ যদি জেনেশুনে এভাবে ভুল করে, তাহলে দেশের জনসাধারণ কী করবে?
ভাঙা দাঁত দীর্ঘ দিন ধরে ব্যথাহীন অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন-
- দীর্ঘ দিন ধরে দাঁতে ক্যারিজ বা গর্ত থাকলে যা প্রথম দিকে শির শির অনুভূতি, ঠাণ্ডা-গরম যেকোনো খাবার মুখে নিলে ব্যথা হতে পারে। এক সময় দাঁতের অভ্যন্তরীণ দন্তমজ্জা তার স্বাভাবিক অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় দাঁতের আরও কিছুটা অংশ ভেঙে গেলেও কোনো ব্যথা অনুভব হয় না।
- একটি দাঁতের বেশির ভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার কারণে রুট ক্যানেল চিকিৎসা করার পর ওই দাঁতের ক্যাপ বা ক্রাউন না করা হলে এক সময় সম্পূর্ণ দাঁত ভেঙে যেতে পারে এবং দাঁত ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এতেও অনেক সময় ব্যথার কোনো অনুভূতি হয় না।
- হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে দাঁত তোলার পর দাঁতের ভাঙা অংশ হাড়ের মধ্যেই বিদ্যমান থাকে এবং দেখা যায় সেখানেও কোনো ব্যথা থাকছে না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অবশ্যই সেই রোগীর ব্যথা হবে এবং ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়বে।
ভাঙা দাঁতের মুখে যেসব সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে :
- ভাঙা দাঁতের ভেতরে অবস্থিত দন্তমজ্জায় পচন ধরার ফলে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলে পাশের দাঁতের সমস্যা হতে পারে।
- ইনফেকশন বৃদ্ধি পেয়ে মুখের হাড়ে অসটিওমাইলাইটিস জাতীয় জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
- ভাঙা দাঁতের গর্তে বা ফাঁকা স্থানে ঢুকে থাকা খাদ্যকণা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
- ভাঙা দাঁতের ধারালো অংশের ঘর্ষণে জিহ্বার বা গালের নরম অংশে ঘা হতে পারে। এই ঘা কিছু দিন পর ভালো হয়, আবার আঘাতের ফলে সেই ঘা আবার জেগে ওঠে। এভাবে কিছু দিন পর পর এ অবস্থার পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে তা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
দাঁত ভেঙে গেলেই যে তুলে ফেলতে হবে এমনটি নয়। কারণ দন্ত চিকিৎসা এখন খুবই উন্নত এবং আধুনিক হয়েছে। এক একটি ভাঙা দাঁতকে রাখার জন্য রুট ক্যানেল করে গোরসেলিন বা মেটালিক ক্যাপ করে সংরক্ষণ করা সম্ভব। তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সময়মতো সুচিকিৎসাই নিশ্চিত করতে পারে আপনার সুন্দর হাসি। তবে একটি কথা, অবশ্যই অভিজ্ঞ ডেন্টাল চিকিৎসকের সাহায্যেই কাজ করানো উচিত, তা না হলে ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে।
ডা: নাহিদ শারমিন নূপুর
ডাইরেক্টর ও ডেন্টাল সার্জন,
নাহিদ ডেন্টাল কেয়ার, ১১৭/১, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।