Total Pageviews

ঘামাচির প্রতিকার

Share:

ঘামাচির প্রতিকার

বাংলায় আমরা যাকে ঘামাচি বলি তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় (Miliaria)। এটি একটি ঘর্মগ্রন্থির রোগ। ঘর্মগ্রন্থির নালী অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও গরমে বন্ধ হয়ে এ রোগের সৃষ্টি করে। এ রোগটি গ্রীষ্মকালে দেখা যায় এবং শীতকাল এলে আপনা-আপনিই ভালো হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম নিঃসরণ হতে থাকে। ফলে তখন এত বেশি পরিমাণ নিঃসরণ কেবল ঘর্মগ্রন্থির ছিদ্রপথে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ফলে ওই নিঃসরণ ধর্মগ্রন্থিকে ফুটো করে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে এবং সে স্থান ফুলে ওঠে। সেই সাথে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি ও সামান্য জ্বালাপোড়া ভাব এবং খুব ছোট ছোট উদ্ভিদ। মূলত এটাই হচ্ছে ঘামাচি। ঘামাচি তিন ধরনের হয়। যেমন মিলিয়ারিয়া, কৃস্টালিনা। এ ক্ষেত্রে ঘর্ম নালীর মুখের অংশটি কালো দেখা যায় এবং এ ক্ষেত্রে ত্বক দেখতে প্রায় স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। সাধারণত এ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গই থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উজ্জ্বল পানির দানা স্বাভাবিক ত্বকের ওপর হতে দেখা যায়। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ মিলিয়ারিয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর রুদ্ধতা দেখা যায়। ত্বকের বহিঃত্বকের মধ্যের ঘর্মনালীতে এবং এ ক্ষেত্রে ত্বকের ওপরে ছোট ছোট অসংখ্য গোটা দেখা যায়। যে গোটার মাথায় পানির দানা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে, যা লালচে ত্বকের ওপর হতে দেখা যাবে এবং সেই সাথে থাকবে প্রচণ্ড চুলকানি, যা মূলত শরীরের মূল অংশ ও ঘাড়ে বেশি হতে দেখা যায়।


তৃতীয়টি অর্থাৎ Miliaria Profounda-এর ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর Block বা বদ্ধতা মূলত ত্বকের বহিঃত্বক ও অন্তঃত্বকের মিলন স্থানে দেখা দেয় অর্থাৎ ত্বকের অনেক গভীরে। কাজেই ত্বক দেখতে অনেকটা স্বাভাবিক ধরনের মনে হয় এবং এ ক্ষেত্রে এই দানা বা গোটা মূলত দেহের মূল অংশে (Trunk) এবং হাতে ও পায়ে হতে দেখা যায়। এই তিন ধরনের মধ্যে Miliaria সবচেয়ে বেশি হয়। এ রোগটি গরমকালে হয় বলে তাকে Heat Rash বলা হয়ে থাকে। গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশি হয় এবং গরমকালে যারা গায়ে তেল মাখেন, তাদের এ রোগ বেশি হয়। এ রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। চোখে দেখে চিকিৎসকরা এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে Folliculiltis কিংবা ত্বকের CANDIDIASIS অথবা Contact Dematititis-এর মতো দেখতে মনে হয় বলে চিকিৎসকরা Confusion-G ভুগে থাকেন।


চিকিৎসা : মূল চিকিৎসা হলো গরম আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটিয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশে যেতে হবে। আর যদি Air Cooler-এর ব্যবস্থা সম্ভব না হয় তাহলে সার্বক্ষণিক ফ্যানের নিচে থাকতে হবে, যেন ত্বকের সংস্পর্শে বাতাস খেলতে পারে। এ ছাড়া হাইড্রোকটির্সোন ১% ব্যবহার করলে ত্বকের চুলকানি কমে যায়। এ ছাড়া Anthical Lotion অথবা Calamine Lotion লাগিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায় এবং এর সাথে Antihistaminও ব্যবহার করা যায়।

অতিরিক্ত ঘাম : হাত ও পায়ের তালুসহ শরীর থেকে অল্প পরিমাণ ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক দৈহিক ক্রিয়া। কিন্তু সে যদি অধিক পরিমাণে হয় বা তা থেকে যদি দুর্গন্ধ নির্গত হয়, তবে তাকে বলা হয় Hyperhidrosis। এটা Localized বা Generalized অর্থাৎ পুরো শরীরে হতে পারে। লক্ষ করলে দেখবেন অনেকেরই শুধু হাত কিংবা হাত ও পা একত্রে অধিক পরিমাণ ঘামে এবং কখনো কখনো দুর্গন্ধও হয়। এটি রোগ শোক, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও আবেগচালিত ব্যক্তিদেরই বেশি হয়। এ ছাড়া Spicy Food, টমেটো, সস, চাকোলেট, চা, কপি ও গরম সুপ খেলে অতিরিক্ত ঘর্ম হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কপালে, ওপরের ঠোঁটে, ঠোঁটের আশপাশে এমনকি বুকের মধ্যখানে অধিক মাত্রায় ঘাম শুরু হতে দেখা যায়। খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এ ধরনের অতিরিক্ত ঘর্ম হওয়াকে বলা হয় Gustatory huper hydrosis।

চিকিৎসা : ২০ ভাগ অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড টিংচার সপ্তাহে তিনবার প্লাস্টিক গ্লোবসের মাধ্যমে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঘুম ও দুশ্চিন্তানাশক ওষুধের সাথে Probanthinc ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঘর্মরোধ : Anhydrosis ঘাম না হওয়াকেই ঘর্মরোধ বলা হয়। বিভিন্ন কারণে এ রোগ হতে পারে। যেমন জন্মগতভাবে যদি ঘর্মগ্রন্থি অনুপস্থিত থাকে কিংবা স্নায়ুতন্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অনুভূতি ক্ষমতা কমে যায়। অথবা কোনো বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহারে ঘর্মগ্রন্থি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে, লোমকূপের মধ্যে অধিক পরিমাণ ময়লা জমলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে Diprovate-MF মলম ব্যবহারের পাশাপাশি Tab. Betnelan 0.5mg একটি করে দিনে তিনবার দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।


ডা: দিদারুল আহসান
চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ।
চেম্বার : আলরাজী হাসপাতাল, ১২ ফার্মগেট, ঢাকা।