Total Pageviews

নবজাতকের চর্মরোগ, কীভাবে সারিয়ে তুলবেন?

Share:

নবজাতকের চর্মরোগ, কীভাবে সারিয়ে তুলবেন?


ত্বকের যত্ন সম্পর্কে প্রত্যেক মায়ের সঠিক জ্ঞান রাখা একান্ত প্রয়োজন। মায়ের পেটের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে শিশু যখন জন্ম নেয় একটি সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে, তখন তার প্রতিক্রিয়াও নানারকম হতে পারে। যেমন - বেশি নরম কিংবা বেশি ঠাণ্ডা আবহাওয়া, মশা-মাছি বা পোকামাকড়ের কামড় বা বেশি তেল সাবান মাখামাখির কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে চামড়ার গুরুতর সমস্যা হতে পারে।


শিশুর জন্মের পর দেখা যায় নানা রকম জন্মদাগ। এতে ঘাবড়ানোর কিছুই নেই। এগুলো কোনো ক্ষতি করে না বা চিকিৎসার দরকার নেই। শিশুর গাল, নাক, মাথার পেছন ভাগে, হাতে পায়ে বাদামি রঙের ছোপের মত উঁচু স্থান দেখা যায় একে হিমানজিওমা বা রক্তের টিউমার বলা হয়। এটির জন্য কোনো চিকিৎসা বা অপারেশনের দরকার হয় না, আস্তে আস্তে কয়েকমাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। জন্মের পরপরই চামড়ার কিছু পরিবর্তন দেখা দেয় যা স্বাভাবিক। যেমন : চামড়া উঠা, চামড়ার ময়লা উঠা ইত্যাদি। এ সময় বেশি তেল, মাজন কোনোটাই লাগানো ঠিক নয়।



শিশুর জন্মের প্রথম দু’একদিনের ভেতর যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তা হচ্ছে- ইরাইথেমা টক্সিকাম নিওনেটোরাম (Erythema toxicum neonaturum) বা মাসিপিসি। এক্ষেত্রে শিশুর দেহে লাল লাল ভাব র‌্যাশের আকারে ফুটে উঠে। সাধারণত, মুখমণ্ডল, বক্ষপিঞ্জরের ত্বক, হাত-পায়ের ত্বকে গুটি গুটি দানার মতো উঠে এবং সাথে কোনো রকম জ্বর বা অন্যরকম অসুস্থতা থাকে না। ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসার কোনো প্রয়োজন হয় না।

শিশুর মুখ, কপাল ও থুতনিতে ছোট ছোট মুক্তোর মত সাদা বা তলপেটে ফুসকুড়ির মতো অসংখ্য দানাকে ডাক্তার ভাষায় বলা হয় মিলিয়া এগুলোরও চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না।

শিশুদের আরো কতগুলো চর্মরোগ দেখা দেয় তার মধ্যে সেরোরিক অ্যাকমিজা, ডায়াপার র‌্যাশ, খোসপাঁচড়া, ব্রাস, ফাঙ্গাস ইনফেকশন, ভাইরাস ইনফেকশন, ইসপেটিশে প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।


সিরোবিক অ্যাকজিমা শিশুদের মাথায়, ভ্রুণ, নাকের ভাঁজে, ঠোঁটে কানের পেছনে, বুকে, বগলে, নাভীতে, কুচকিতে, পেছনের ভাঁজে দেখা দেয়। মাথায় চটচটে আঠালো খুশকির মতো কখনো লেগে থাকে, সহজে উঠতে চায় না। এক্ষেত্রে শিশুকে তেল দেয়া যাবে না। কখনো কখনো সাদা খোসা শরীরের অন্য জায়গা থেকে ঝরে পড়ে সমস্ত গায়ে ছড়িয়ে পড়ে চামড়া লাল হয়ে যায়। পানি নিঃসরণ হয় ও চুলকানি হয়। এ ধরনের সমস্যায় সেলসান শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। সাথে অ্যান্টিবায়োটিক সিরাপ দেয়া হয়। ছত্রাকের মধ্যে ক্যানডিডা শিশুদের বেশি ভোগায়। জন্মের সময় মায়ের সংক্রমণ শিশুদের সংক্রমিত করে।

যেমন- সাদা আস্তরণ জিহ্বা ও গালের ভেতর দেখা যায়। মুখের ভেতর থেকে ঠোঁটের কোণায় চলে আসে। মুখ ছাড়া ক্যানডিডা শিশুদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে, ভাঁজগুলোতে বেশি হয়। যেমন: গলার ভাঁজে, বগলে, ঘাড় কুচকিতে ও প্রস্রাব পায়খানায় রাস্তার চতুর্দিকে বেশি দেখা দেয়। চিকিৎসার জন্য ক্লোট্রিমাজল, নিস্টাটিন মলম ও ড্রপ দেয়া হয়।


অ্যাটোপিক ডারসাটাইটিসি হলে শিশুর মুখ, হাত পা অনেক সময় সারা শরীরে থমথমে চুলকানি দেখা দেয়। কোনো বিশেষ অ্যালার্জিজনিত খাবার, ধুলাবালি থেকে শুরু হতে পারে। এ ধরনের চুলকানিতে সাবান তেল, ব্যবহার না করাই ভালো। বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা নেয়া উচিত।

ন্যাপকিন র‌্যাশ
শিশুদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। শিশুরা বারবার প্রস্রাব-পায়খানা করে ভেজায় বলে মায়েরা ডায়পার পরিয়ে থাকেন। সবসময় খেয়াল রাখা উচিত যে ভেজানো মাত্র পরিবর্তন করতে হবে। দীর্ঘ সময় পরিয়ে রাখলে ওর মধ্যে জমে থাকা প্রস্রাবের ইফরিয়া ও পায়খানার জীবাণু মিলে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে থাকে এবং ন্যাপকিনে ঢাকা জায়গায় র‌্যাশের সৃষ্টি করে। র‌্যাশের পাশাপাশি ছত্রাক আক্রমণ করতে পারে। এমতাবস্থায় কিছুদিন পর পর ডায়াপার বাদ দিয়ে জায়গা শুকনা রাখতে হবে এবং অ্যান্টিফাংগাল মলম ব্যবহার করতে হবে।


খুজলী পাঁচড়া
ছোট বড় সব শিশুরাই আক্রান্ত হতে পারে। ঘনবসতি, দ্রারিদ্র্যতা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও রোগীর সংস্পর্শে আসলে এ রোগ হতে পারে। অসহনীয় চুলকানি হয়। হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে, চিপায়, কব্জিতে, পেটে এবং পেছনের দিকে হয়ে থাকে। পরে পেকে যায় সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যথা হয়, জ্বর আসতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না করালে কিডনিতে প্রদাহ, অ্যাকজিমা হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শে scabisol, persithin, Tetmosol ব্যবহার করা হয়। চুলকানির জন্য হিস্টাসিন এবং পুঁজ হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় ওজন অনুসারে।

ইসপেটিগো : শিশুর মুখে হাতে বা শরীরের কোন অংশে ছোট ছোট দানা হয়ে পেকে যায়।

আবটিকেরিয়া
শিশুর সমস্ত শরীরে লাল লাল চাকা হয়ে ভীষণ চুলকানি হয়। বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি, কোনো ওষুধ, বেশি ঠাণ্ডা, গরম, পোকার কামড়, ফুলের রেণু থেকেও হতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টাসিন দিতে হবে এবং অ্যালার্জি পরিহার করতে হবে।

ডা: শাহীদা হোসাইন