Total Pageviews

'নাকের হাড় বাকা' কারন ও প্রতিকার

Share:
'নাকের হাড় বাকা' কারন ও প্রতিকার


'নাকের হাড় বাকা' কারন ও প্রতিকার


নাকের হাড় বাকা (Deviated Nasal Septum বা DNS) একটি সাধারণ অবস্থান যা নাকের মধ্যবর্তী পর্দা (যা সেপটাম নামে পরিচিত) বেঁকে গিয়ে নাকের একপাশে ঝুঁকে থাকে। সেপটাম হল নাকের দুই পাশকে আলাদা করা হাড় এবং কারটিলেজের সংমিশ্রণ। যখন সেপটাম বেঁকে যায়, তখন এটি নাকের গঠন ও শ্বাস প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

নাকের হাড় বাকার কারণ:

  1. জন্মগত সমস্যা: অনেক ক্ষেত্রে, সেপটাম বেঁকে থাকতে পারে জন্মের সময়। এটি তখনই শুরু হয়, যখন ভ্রুণের নাকের গঠন ঠিকভাবে সম্পূর্ণ হয় না।
  2. আঘাত বা চোট: দুর্ঘটনা, মুখের আঘাত বা খেলাধুলায় আঘাতের কারণে সেপটাম বেঁকে যেতে পারে। একে "ট্রমাটিক ডেভিয়েশন" বলা হয়। অনেক সময়, হালকা আঘাতও দীর্ঘদিন পরে নাকের কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে পারে।
  3. বয়সজনিত পরিবর্তন: বয়স বাড়ানোর সাথে সাথে শরীরের অন্যান্য অংশের মতো নাকের হাড়ও পরিবর্তিত হতে পারে। এই পরিবর্তন নাকের সেপটামকে বেঁকে ফেলতে পারে।
  4. আনফেভারেবল পরিবেশ: ধোঁয়া, দূষণ, অ্যালার্জি বা সর্দির মতো সমস্যার কারণে নাকের ভিতরের অংশে চাপে পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা সেপটামকে আরো বেঁকে ফেলতে পারে।

লক্ষণ বা উপসর্গ:

  1. শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা: নাকের একপাশ বন্ধ বা শ্বাস নিতে কষ্ট হলে এটি অন্যতম প্রধান লক্ষণ। অনেক সময় নাকের একপাশ খোলা থাকে, অন্যপাশ বন্ধ থাকে।
  2. সর্দি বা অতিরিক্ত শ্লেষ্মা: নিয়মিত সর্দি বা শ্লেষ্মা জমে থাকলে তা একপাশে শ্বাস নিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  3. ঘুমের সমস্যা: ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে, যা স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নাক দিয়ে ঠিকমতো শ্বাস না নেওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  4. মাথাব্যথা: দীর্ঘদিন নাকের হাড় বাকা থাকলে মাথাব্যথা বা ফেসিয়াল পেইন হতে পারে।
  5. নাকের ব্লকড অনুভুতি: একটি পাশের নাক প্রায়ই বন্ধ থাকে, যাকে "নাক বন্ধ হওয়ার অনুভুতি" বলা হয়।

যদি সমস্যা গুরুতর হয় বা দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তবে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। চিকিৎসা পদ্ধতিতে সাধারণত নাকের সেপটাম সোজা করার জন্য অস্ত্রোপচার (সেপটোপ্লাস্টি) করা হয়।

এটি এমন একটি সমস্যা যা সাধারণত চিকিৎসক বা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা ও নির্ণয় করা হয়।


চিকিৎসা:

  1. ওষুধ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সাধারণ চিকিৎসা বা ওষুধ (যেমন নাসাল ডিকনজেস্ট্যান্ট, অ্যান্টিহিস্টামিন বা নাকের স্প্রে) শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এগুলি কেবল সাময়িক উপশম প্রদান করতে পারে।

  2. সেপটোপ্লাস্টি (Surgical Treatment): যদি উপসর্গ গুরুতর হয় বা ওষুধের মাধ্যমে সমাধান না হয়, তবে সেপটাম সোজা করার জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। সেপটোপ্লাস্টি একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার যেখানে সেপটাম সোজা করা হয় এবং এর মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দূর করা যায়।

  3. রাইনোসিনুসাইটিসের চিকিৎসা: যদি নাকের হাড় বাকা হওয়ার ফলে সাইনাসের সমস্যা (রাইনোসিনুসাইটিস) সৃষ্টি হয়, তবে সেই সমস্যার চিকিৎসা করা প্রয়োজন। সাধারণত, অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য চিকিৎসা এই অবস্থায় সাহায্য করে।

  4. লেসার থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে লেসার প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে পারে, যদিও এটি সাধারণত প্রচলিত নয় এবং সেপটাম পরিবর্তন করার জন্য একে সমর্থন করা হয় না।

অস্ত্রোপচার (Surgical Treatment):

সেপটাম সোজা করার জন্য অস্ত্রোপচার বা সেপটোপ্লাস্টি করা হয়। এই প্রক্রিয়াতে সেপটামের যে অংশটি বেঁকে গেছে, তা সরিয়ে বা ঠিক করে দেওয়া হয়। এটি সাধারণত একটি ছোট অস্ত্রোপচার যা স্থানীয় বা সাধারণ অ্যানাস্থেসিয়া দিয়ে করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন এবং পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু সময় লাগে।

পরবর্তী বিষয়:

  • সেপটোপ্লাস্টির পর পুনরুদ্ধার: অস্ত্রোপচারের পর কিছুদিন নাকে ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। তবে, বেশিরভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
  • নাকের কষ্ট বা অস্বস্তি: অস্ত্রোপচারের পর কিছুদিন নাকের ভিতরে অস্বস্তি বা কষ্ট হতে পারে, তবে এটি সাধারণ এবং স্বাভাবিক।

এছাড়া, ডাক্তার সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নির্ধারণের জন্য ব্যক্তিগত লক্ষণ ও অবস্থা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন।